দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা
১৭৬৪ খ্রিঃ বক্সারের যুদ্ধের পর কোম্পানীর পক্ষে যে অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তার সদ্ব্যবহার করে ক্লাইভ বাংলার সুবার দেওয়ানি লাভ করেন। কোম্পানী দেওয়ানী অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করলেও নিজামত ক্ষমতা অর্থাৎ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, প্রশাসন চালনার দায়িত্ব ছিল নবাবের হাতে। চুক্তি অনুযায়ী (ফেব্রুয়ারী, ১৭৬৫ খ্রিঃ)নবাব নজম-উদ্-দৌলা কোম্পানী নিযুক্ত নায়েব নাজিমের হাতে প্রশাসনের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। এইভাবে বাংলার শাসনব্যবস্থায় দুই কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়। এই ব্যবস্থা দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা নামে পরিচিত।
দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার স্বরূপ
বাংলার শাসনব্যবস্থায় দ্বৈতশাসন ছিল এক অভিনব ব্যবস্থা। কোম্পানির হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছিল অথচ কোম্পানি কোন দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। অপরদিকে নবাবের হাতে সমস্ত দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও নবাব কোন ক্ষমতা ভােগ করতে পারত না। এককথায়, কোম্পানির হাতে ছিল দায়িত্বশীল ক্ষমতা ও নবাবের হাতে ছিল ক্ষমতাহীন দায়িত্ব।
দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার পরিণাম
দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বাংলা দেশে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টিকরে। প্রশাসনিক দায়িত্ব নবাবের হাতে থাকলেও আর্থিক সম্পদ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় নবাবের পক্ষে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব ছিল না। কোম্পানির দিক থেকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোন আগ্রহও ছিল না। বরং প্রজাদের উৎপীড়ন করে কোম্পানি অধিক পরিমাণে অর্থ সংগ্রহের দিকে বিশেষ নজর দিত। প্রকৃতপক্ষে দ্বৈত শাসনের ফলেই বাংলা দেশে দেখা দিয়েছিল ভয়ঙ্কর মন্বন্তুর যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে খ্যাত। তাই নিখিল সুর বলেছেন, “দ্বৈত শাসনের গর্ভেই লালিত হয়েছিল এই মন্বন্তর।
পরিশেষে বলা যায়, দ্বৈতশাসনের ফলে একদিকে চলে শােষণ ও উৎপীড়ন এবং অন্যদিকে চলে বাংলার সম্পদ ইংল্যাণ্ডে পাচার। ঐতিহাসিক জন কে মন্তব্য করেছেন। যে, দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা ও দুনীতি বৃদ্ধি করেছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .