তেভাগা আন্দোলন
ক্লাউড কমিশন ভাগচাষী বা আধিয়াদের জন্য উৎপন্ন সকলের দুই-তৃতীয়াংশ প্রাপ্য বলে সুপরিশ করে। এই সুপারিশকে কার্যকর করার জন্য বাংলার বিভিন্ন জেলার ভাগচাষিরা যে আন্দোলন করেন তা তেভাগা আন্দোলন নামে পরিচিত।
তেভাগা আন্দোলনের আন্দোলনের সূচনা
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে তেভাগা আন্দোলনের সূচনা ঘটে। ১৯৪৬ খ্রিঃ খুলনা জেলার মৌভােগে কৃষক সভার যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে কৃয়। বিনােদ রায়ের সভাপতিত্বে যেসব প্রস্তাব নেওয়া হয়, তাতেই প্রথম তেভাগা আন্দোলনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। কাকদ্বীপের (দঃ চব্বিশ পরগণা) বুধাখালিতে গজেন মালি নামে এক কৃষক নেতা আন্দোলনের সূচনা করেন।
তেভাগা আন্দোলনকারীদের দাবি
তেভাগা আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবিগুলি ছিল— ক) উৎপন্ন ধানের ৩/২ ভাগে নিজ অধিকার স্থাপন, খ) কর্জা ধানের উপর সুদ প্রথার অবদান, গ) রশিদ ছাড়া ধান দেওয়া হবে না। ঘ) আবাদযােগ্য পতিত জমিতে আবাদের ব্যবস্থা।
তেভাগা আন্দোলনের বিস্তার
দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার আর্টোয়ারী থানার রামচন্দ্রপুর গ্রামে তেভাগা আন্দোলনের ধানকাটার সূচনা হয়। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে দিনাজপুর জেলার ২২টি থানায়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দেবীগড়ের বুড়িমা’ নামে এক রাজবংশী বিধবা মহিলা, হাজি মহম্মদ দানেশ, চারু মজুমদার ভবানী সেন, অবনী লাহিড়ী, অনন্ত সিং, সমর গাগুলি প্রমুখ। আন্দোলন বেশ কিছু অঞলে জঙ্গী রূপ ধারণ করে।
তেভাগা আন্দোলনের ব্যর্থতা
পুলিশের দমননীতির ফলে এই অন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। আন্দোলনকে রক্ত বন্যায় ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহের ম্যজিস্ট্রেট ব্যাস্টিন সাহেব নিরস্ত্র কৃষকদের উপর পুলিশ ও মিলিটারি লেলিয়ে দেন। শেষপর্যন্ত ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে এই আন্দোলন শুদ্ধ হয়ে যায়।
তেভাগা আন্দোলনের ফলাফল
শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস মন্ত্রিসভা ১৯৫০ খ্রিঃ একটি বর্গাদার বিল পাশ করে এই আন্দোলনে মূল দাবিগুলি গ্রহণ করে নেয়। জমি থেকে ভাগচাষীদের উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে যায়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .