দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বে ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট ও সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটে গােটা বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই দ্বিমেরুকরণ রাজনীতি ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত। ঐতিহাসিকেরা ঠান্ডা লড়াইকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। অনেকের মতে ঠান্ডা লড়াই ছিল পূর্ব ও পশ্চিম ভাবধারার সংঘাত। এম. এস. রাজন-এর মতে—ঠান্ডা লড়াই ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আদর্শের সংঘাত, জীবনধারার বিরােধ থেকে উদ্ভূত।
ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ঠান্ডা লড়াই। ঠান্ডা লড়াইয়ের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল—
(১) কর্তৃত্ব, প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে মহাশক্তিধর রাষ্ট্ররূপে আবির্ভাব ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত রাশিয়ার। তাই ঠান্ডা লড়াই বলতে বােঝায় মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে সারা বিশ্বে নিজ নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার
প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে।
(২) বিভিন্ন দেশের সমর্থন লাভের দ্বন্দ্ব
উভয় রাষ্ট্রই বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে ও তাদের সাহায্য ও সহযােগিতা লাভ করতে তৎপর ছিল। বিভিন্ন দেশের সমর্থনলাভের দ্বন্দ্বকে ঘিরে উদ্ভব ঘটে দ্বিপক্ষীর রাজনীতির।
(৩) মতাদর্শগত বিভেদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অছিলায় এবং সােভিয়েত রাশিয়া সাম্রাজ্যবাদ বিরােধিতা ও সাম্যবাদের পক্ষে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। এর পরিণতি হিসেবে ঠান্ডা লড়াই বহুলাংশে রাজনৈতিক মতবাদের লড়াই-এ পরিণত হয়।
(৪) সামরিক বলবৃদ্ধি
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইকে কেন্দ্র করে দুই শক্তিজোট ভিতরে ভিতরে জোর সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে। প্রবল থেকে প্রবলতর শক্তিসম্পন্ন মারণাস্ত্র তৈরি ও সেগুলির পরীক্ষার নামে যুদ্ধ মহড়া শুরু হয় দুই শিবিরে। এইভাবে উভয় পক্ষই প্রবল সামরিক বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে। বিশ্বে আতঙ্কনজক বাতাবরণ গড়ে ওঠে, যা ঠান্ডা লড়াই নামে অভিহিত হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .