Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি/ঠান্ডা লড়াই উদ্ভবের পরিস্থিতি সম্বন্ধে যা জানলেখাে।

ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি/ঠান্ডা লড়াই উদ্ভবের পরিস্থিতি সম্বন্ধে যা জানলেখাে।

ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি

ঠান্ডা লড়াইয়ের এই উদ্ভবের ব্যাখ্যাগুলিকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এগুলি হল- (১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী; (২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এবং (৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী পর্যায়

রুশ বিপ্লবের সময় থেকেই বলশেভিকরা আদর্শগত কারণে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগােষ্ঠীর চক্ষুশূল ছিল। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবকে দমন করার জন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগােষ্ঠী (আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স) জারতন্ত্রের সমর্থনে রাশিয়ায় সেনা পাঠায়। সমাজতন্ত্রকে সূচনাকালেই শেষ করে দেওয়া ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কাজেই রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের জন্মলগ্ন থেকেই বিশ্বে ‘দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির জন্ম হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পর্যায়

দ্বিতীয় রণাঙ্গনের ভূমিকা

যুদ্ধ চলাকালে জার্মানির প্রবল আক্রমণে দিশাহারা সােভিয়েত রাশিয়ার পশ্চিমি জোটের কাছে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খােলার অনুরােধকে নিয়ে চার্চিলের দুমুখাে নীতি স্টালিনকে ক্রুদ্ধ করে তােলে।

মার্কিন সমর দপ্তর পেন্টাগনের প্রভাব

মার্কিন সামরিক দপ্তর পেন্টাগনের সেনাপতিরা কট্টর রুশ বিরােধী ছিলেন। তারা কখনােই চাননি আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নরম মনােভাব পােষণ করুক। তারা মার্কিন রাষ্ট্রপতি টুম্যানকে সােভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করতে উসকানি দেন। এ ছাড়াও ইয়াল্টা সম্মেলনে। (১৯৪৫ খ্রি.) পােল-সীমান্ত নিয়ে সােভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমি শক্তিগুলির মতপার্থক্য এবং গ্রিসের মুক্তিযুদ্ধে ইঙ্গ-মার্কিন হস্তক্ষেপ লিনকে রুষ্ট করে তােলে।

টুম্যানের দায়িত্ব

আমেরিকার নতুন রাষ্ট্রপতি টুম্যান ছিলেন প্রবলভাবে সােভিয়েত-বিরােধী। পােল্যান্ড থেকে জার্মান সৈন্য সরে গেলে সেখানে রুশ প্রভাবিত সরকার গঠিত হয়। এতে ক্রুদ্ধ টুম্যান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলােটভের কাছে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পটল্ডাম সম্মেলন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন শেষ শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় পটল্ডামে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে। পটল্ডাম সম্মেলনে জার্মানির সমস্ত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়নি। জার্মানির ভবিষৎ নির্ধারণ নিয়ে সােভিয়েত ও মার্কিন মতবিরােধ প্রকট হয়ে ওঠে। পারস্পরিক চাপানউতােরের মধ্যে দিয়ে এই সম্মেলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বলা হয় পটল্ডাম সম্মেলন থেকেই ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে আসে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়

পাঁচ বিদেশমন্ত্রীর সম্মেলন

অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে শান্তি চুক্তির খসড়া রচনার লক্ষ্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, সােভিয়েত রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চিন এই পাঁচটি দেশের বিদেশমন্ত্রীরা এক কাউন্সিল গঠন করেন। কিন্তু এই কাউন্সিলের কার্যকলাপে সােভিয়েত রাশিয়ার সন্দেহ হয় যে পশ্চিমি শক্তি পূর্ব ইউরােপে দ্রুত হাজির হওয়ার উদ্দেশ্যে জার্মানির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

চার্চিলের ফালটন বক্তৃতা

ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের অন্তর্গত ফালটনে ওয়েস্টমিনস্টার কলেজে এক ভাষণে (১৯৪৬ খ্রি., ৫ মার্চ) বলেন, উত্তর বালটিক সাগরের তীরবর্তী স্টেটিন থেকে দক্ষিণে অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের ট্রিয়েস্ট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল লৌহ যবনিকার (সােভিয়েত) আড়ালে ঢাকা। ফালটন বক্তৃতায় চার্চিল রুশ আগ্রাসন থেকে ইউরােপীয় সভ্যতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অর্পণ করেন।

কেন্নানের বেষ্টনী তত্ত্ব

সােভিয়েত রাশিয়ায় কর্মরত প্রাক্তন সহকারী মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কেন্নান, মি. এক্স ছদ্মনামে আমেরিকার ফরেন অ্যাফেয়ার্সনামক পত্রিকায় এক প্রবন্ধে সােভিয়েত রাশিয়ার আক্রমণাত্মক নীতি প্রতিহত করার জন্য এবং সােভিয়েত প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য বেষ্টনী-তত্ত্ব’ (১৯৪৭ খ্রি., ৪ জুলাই) প্রকাশ করেন, যা মার্কিন প্রশাসন মেনে নেয়।

টুম্যান নীতি

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি টুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় (১৯৪৭ খ্রি., ১২ মার্চ) তুরস্ক ও গ্রিস সহ বিশ্বের যে-কোনাে দেশকে সােভিয়েত অগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন যা টুম্যান নীতি নামে পরিচিত। ঠান্ডা লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় এই নীতি ঘােষণার মাধ্যমে।

মার্শাল পরিকল্পনা

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন আমেরিকা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী জর্জ মার্শাল যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরােপে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এক পরিকল্পনা পেশ করেন, যা মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত। ইউরােপে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা নিয়ে টুম্যান নীতির পরিপূরক হিসেবে উপস্থাপিত হয় এই মার্শাল পরিকল্পনা। ফলে আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে ঠান্ডা লড়াই।

সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে আর্থিক সহায়তা পরিষদ গঠন

সােভিয়েত রাশিয়া, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠন করে কমিকন নামে একটি আর্থিক সহায়তা পরিষদ। মার্শাল পরিকল্পনার প্রত্যুত্তর হিসেবে কমিকন গঠিত হয়েছিল।

আমেরিকার নেতৃত্ব শক্তিজোট গঠন

সােভিয়েত আগ্রাসন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে গড়ে তােলে ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা। তারপর একে একে গড়ে তােলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা’, ‘মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষা সংস্থা। পরবর্তীকালে এটির নাম হয় ‘মধ্য এশিয়া চুক্তি সংস্থা’, ‘অ্যানজাস’ ইত্যাদি শক্তিজোট।

সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে শক্তিজোট গঠন

আমেরিকার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পশ্চিমি সামরিক শক্তিজোট ন্যাটোর জবাবে সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব ইউরােপীয় দেশগুলিকে (রাশিয়া, পােল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া, রুমানিয়াে, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া ও পূর্ব জার্মানি) নিয়ে গঠিত হয় ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা, যা ছিল একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

উপসংহার

শুধুমাত্র ইউরােপেই নয়, ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিধি সারা বিশ্বেই সম্প্রসারিত হয়। এক ভয়ংকর যুদ্ধভীতি সমগ্র বিশ্বের মানুষকে অস্থির করে তোল। মরগ্যানথাউ এবং লুই জে. হ্যালের মতাে বাস্তববাদীরা ঠান্ডা লড়াইকে মূলত ক্ষমতার রাজনীতি আর শক্তিসাম্যের সংকট থেকে উদ্ভূত এক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নােয়াম চমস্কির মতে—ঠান্ডা যুদ্ধ হল এমন একটি কার্যকরী ব্যবস্থা যাতে মহাশক্তিধর দেশগুলি নিজেদের অঞ্চলগুলি নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল।

Leave a reply