মেকলে মিনিটস্
উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্নধর্মী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখযােগ্য পাশ্চাত্যপন্থী ব্রিটিশ উচ্চপদস্থ কর্মচারী লর্ড মেকলের প্রতিবেদন বা মেকলে মিনিটস্’। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভারতে ইংরেজী শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মেকলের যুক্তি : ইংরেজী শিক্ষা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে তার যুক্তিগুলি হলাে—
১) ভারতের দেশীয় ভাষাসমূহ অত্যন্ত দীন ও ঐশ্বর্যহীন। সুতরাং মাতৃভাষা শিক্ষার বাহন হতে পারে না। পাশ্চাত্য শিক্ষাকে প্রথমে উচ্চবিত্তদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ইংরেজী শি’র প্রসার ঘটলে তা নিম্নমুখী পরিশ্রত রীতি অনুসারে ধীরে ধীরে ভারতবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।
৩) ইংরেজি শিক্ষা একমাত্র পারবে অজ্ঞ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারতবাসীকে শিক্ষার আলােয় নিয়ে আসতে।
৪) প্রশাসনে ইংরেজি শিক্ষায় ভারতীয়দের নিযুক্ত করলে সরকারের পক্ষে তা বেশি লাভজনক হবে বলে বিবেচিত হয়।
বেন্টিঙ্কের ঘােষণাঃ মেকলের যুক্তিকে লর্ড বেন্টিঙ্ক সমর্থন করেন। পাশ্চাত্যবাদী ও জেরােমি বেশ্যামের হিতবাদী আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত বেন্টিঙ্ক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন সবরকমের উন্নয়নের চাবিকাঠিইংরেজি ভাষা। তাই তিনি মেকলের প্রস্তাবকে গ্রহণ করে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন (৭ই মার্চ, ১৮৩৫ খ্রিঃ)।
পরিশেষে বলা যায় মেকলে মিনিট ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের নবদিগন্ত উন্মােচন করেন। আসলে তিনি চেয়েছিলেন এমন একশ্রেণির ভারতীয় তৈরী হবে যারা বর্ণে ও রক্তে হবে ভারতীয় কিন্তু ভাবনা ও রুচিতে হবে ইউরােপীয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .