জোয়া ভাঁটা সৃষ্টির কারণ
প্রধানত দুটি কারণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাঁটার সৃষ্টি হয়। যথা—
- পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল।
- পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব।
পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রানুযায়ী এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা প্রতিটি বস্তুকণাকে তাদের সংযোজক সরলরেখা বরাবর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। যে বস্তুর ভর যত বেশি তার আকর্ষণ মান তত কম। এই সূত্রানুযায়ী, সূর্যের ভর চাঁদ অপেক্ষা 255 লক্ষ গুণ বেশি হলেও অধিক দূরত্বের কারণে পৃথিবীর ওপর চাঁদের (চাঁদ অপেক্ষা সূর্যের দূরত্ব 391 গুণ বেশি) আকর্ষণ বল বেশি। চাঁদ অপেক্ষা সূর্যের আকর্ষণ বল প্রায় 2.2 গুণ কম। তাই, প্রধানত চাঁদের আকর্ষণেই সমুদ্রের জল স্ফীত হয়ে জোয়ারের সৃষ্টি হয়। সূর্যের আকর্ষণে সৃষ্ট জোয়ার তেমন প্রবল আকার ধারণ করে না। পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে জোয়ার প্রবল আকার ধারণ করে।
পৃথিবীর আবর্জনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব
পৃথিবী তার মেরুরেখার চারিদিকে অনবরত ঘোরার কারণে সমুদ্রের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রবণতা লাভ করে। একে কেন্দ্রাতিগ বল বা শক্তি বলে। এই শক্তি মহাকর্ষ শক্তির বিপরীতে কাজ করে। সে কারণে চাঁদের আকর্ষণে যেখানে জোয়ার সৃষ্টি হয় তার বিপরীত অংশে চাঁদের আকর্ষণ অপেক্ষা কেন্দ্রাতিগ বল অধিক কার্যকর হওয়ায়, এই স্থানে জোয়ার সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর আবর্তনের সময় ভূপৃষ্ঠের যে অংশ চাঁদের সামনে আসে, সেখানকার জলরাশি চাঁদের আকর্ষণে সবচেয়ে বেশি ফুলে ওঠে এবং জোয়ার সৃষ্টি করে। একে মুখ্য জোয়ার বা চান্দ্র জোয়ার বলে।
চাঁদের আকর্ষণে ভূপৃষ্ঠের যে অংশে মুখ্য জোয়ার হয়, ঠিক তার বিপরীত অংশের দূরত্ব পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে বেশি হওয়ায় এই স্থানের ওপর পৃথিবীর মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব কম থাকে। অপরদিকে কেন্দ্রাতিগ বল অধিক শক্তিশালী হওয়ায় ওই স্থানে গৌণ বা পরোক্ষ জোয়ারের সৃষ্টি হয়। মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের স্থানে জলরাশি সরবরাহের জন্য এদের মধ্যবর্তী সমকোণে অবস্থিত স্থানগুলিতে জল নেমে যায়। জলরাশির এরূপ অবনমনকে ভাঁটা বলে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .