জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপকতা ও ভয়াবহ ধ্বংসলীলা মনে শান্তিস্পৃহা জাগিয়ে তোলে। যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, আন্তর্জাতিক বিরোধের যাতে মীমাংসা হয় তার শুভ সংকল্প নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়। গ্র্যান্ড ও ট্যাম্পারলি তাই বলেছেন—“The organisation of League of Nations comes therefore of the logical results of this perod.”
অভ্রান্ত আদর্শ
জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট আদর্শের অভাব ছিল। বিজয়ী ও বিজিত রাষ্ট্রের মধ্যে মতানৈক্য এবং জার্মানিকে কোণঠাসা করার প্রচেষ্টার মধ্যে জাতি সংঘের কাজ আন্তর্জাতিকতাবাদের পরিপন্থী ছিল। এমনকি কোনো দেশ নিজ স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখার সম্ভাবনায় জাতিসংঘকে অমান্য করেছে। এটা জাতিসংঘের চরম ব্যর্থতা। শক্তিশালী দেশের
অসহযোগিতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও জার্মানির মতো বৃহৎ দেশগুলিকে জাতিসংঘ সদস্যপদ দেয়নি। জাপান সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেয়। স্বভাবতই জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কৃর্তত্ব
এই দুটি দেশ প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘকে পরিচালিত করত। কিন্তু ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির প্রতি তোষণ নীতির মনোভাব পোষণ করত। ফলে জার্মানির আক্রমণাত্মক নীতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
শান্তিরক্ষায় অক্ষমতা
জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী ছিল না। ফলে শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। তাছাড়া বৃহৎ শক্তিবর্গ নিরস্ত্রীকরণ নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে নিজ নিজ সামরিক শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে থাকে। এর থেকে জাতিসংঘের চরম দুর্বলতার পরিচয় পাওয়া যায়।
উপসংহার
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে অশান্ত বিশ্বে জাতিসংঘ শান্তির ললিত বাণীর সংকল্প নিয়ে এলেও তার নিজ দুর্বলতায় তার উদ্দেশ্যকে সফল করতে পারেনি। বৃহৎ শক্তিবর্গের কাছে তাঁর অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলে। ফলে জাতিসংঘ অচিরেই ব্যর্থতার কালো মেঘে ঢাকা পড়ে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .