জলবণ্টনগত বিরোধ
ভারত নদীমাতৃক দেশ। ভারতের মতো নদীমাতৃক দেশ আরও আছে যেমন—বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, সেনেগাল ইত্যাদি।
মানুষের ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রজীবনে জল এক অপরিহার্য সামগ্রী। গৃহস্থালীর কাজে, পানীয় জল হিসাবে, সেচের জন্য, কলকারখানার উৎপাদনের কাজে, জলপরিবহণের জন্য, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে জল চাই। কিন্তু বৃষ্টিপাত, নদীনালা, জলাশয়, হ্রদ, হিমবাহগলিত জল, ভৌমজল ইত্যদির মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে জলের জোগান পৃথিবীর সর্বত্র, দেশের সর্বত্র, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে বা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সমান হয় না। তাই প্রত্যেক অঞ্চল, রাজ্য, দেশ চায় জলের ওপর নিঃশর্ত অধিকার। বিরোধ এখানেই।
(১) ভারতে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ও শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু থেকে যে বৃষ্টিপাত হয়, তার বণ্টন ও পরিমাণ দেশের সর্বত্র সমান নয়ষ্ট উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি (আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয় ইত্যদি) এবং দক্ষিণ ভারতে পশ্চিমঘাটের পশ্চিমদিকে আরব সাগরের উপকূলীয় অঞ্চল প্রচুর বৃষ্টি পেলেও রাজস্থান সংলগ্ন পশ্চিম ভারতে যথেষ্ট কম বৃষ্টি হয়।
(২) গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের প্লাবনভূমি অঞ্চলের ওপর দিয়ে হিমালয় থেকে উৎপন্ন হিমবাহপুষ্ট জলে পুষ্ট নদী যেমন— গঙ্গা, যমুনা, তিস্তা ইত্যাদি বয়ে যায়। এরা সারা বছর নদীতে জলবহন করে (perennial)। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের কোনো নদীই যেমন গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী ইত্যদি হিমবাহগলিত জল পায় না। ফলে জলের জোগান দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির তুলনায় উত্তর ভারতের নদীগুলিতে বেশি।
(৩) দক্ষিণ ভারত কঠিন আগ্নেয়শিা দ্বারা গঠিত। এই শিলায় ভৌমজল পাওয়ার সমস্য আছে। কিন্তু উত্তর ভারতের অধিকাংশ এলাকা পাললিক শিরায় তৈরি। পাললিক শিরায় ভৌমজল ধারণ করে।ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক কারণেই জলের বণ্টন সমান নয়। এর ওপর আছে জাতিগত অভিমান, রাজনীতির খেলা, গঙ্গা, সিন্ধু, তিস্তার মতো আন্তর্জাতিক নদীগুলির ওপর প্রতিবেশী দেশগুলির কৃষি ও অন্যান্য কারণে নির্ভরতা। সুতরাং ভারতে জলবণ্টনের সমস্যা আছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .