চীনের বক্সার যুদ্ধের প্রকৃতি
বক্সার বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা নানা মত প্রকাশ করেছেন।
(১) ঐতিহাসিক জ্যাক গ্রে-র মতে,এই বিদ্রোহের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশীদের চিন থেকে বিতাড়িত করা। জাঁ শ্যেনে বলেন যে, এই অভ্যুত্থান ছিল চিনাদের একটি জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া এবং খ্রিস্টান মিশনারী ও ধর্মান্তরিত চিনা খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে জেহাদ।
(২) বক্সার বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী যেসব ব্যক্তি ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বেঁচেছিলেন তাদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে, বিদ্রোহীদের প্রায় ৭০ শতাংশই এসেছিলেন কৃষক পরিবার থেকে এবং তাদের বয়স ছিল সাধারণভাবে ১২ থেকে ১৮র মধ্যে। এছাড়া, কুলি, ফেরিওয়ালা, মাঝি, ছােট দোকানদার, কর্মচ্যুত হস্তশিল্প ও স্কুলশিক্ষক এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে অর্থাৎ অধিকাংশই ছিল সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর লােক। সম্রাজ্ঞী জু-সির সম্মতির পর বহু রাজপুরুষও এতে যােগদান করেন।
(৩) এই বিদ্রোহ ছিল বিদেশী-বিরােধী ও খ্রিস্টধর্ম-বিরােধী। জি.এড়, স্টাইগার বলেন যে, বক্সাররা খ্রিস্টধর্ম-বিরােধী ছিল না তাদের সাম্রাজ্যবাদ বিরেধিথা খ্রিস্টান বিরােধিতায় পরিণত হয়।
(৪) কিছু ইউরােপীয় ঐতিহাসিক একে ‘উন্মত্ত গোঁড়ামি’র দ্বারা পরিচালিত ‘প্রতিক্রিয়াশীল অভ্যুত্থান’ বলে চিহ্নিত করেছেন। ঐতিহাসিক ইস্রায়েল এপস্টেইন এই বক্তব্যের তীব্র বিরােধিতা করে এই ধরনের অভিযােগকে ‘অমার্জিত সাম্রাজ্যবাদী কুৎসা বলে অভিহিত করেছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের ঐতিহাসিকরাও এই বিদ্রোহকে দেশপ্রেমিক চিনাদের সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী সংগ্রাম বলে মনে করেন।
চীনের বক্সার যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব
চিনের ইতিহাসে বক্সার বিদ্রোহের গুরুত্ব অপরিসীম।
(১) এই বিদ্রোহের ফল হিসেবে চিনে বিদেশী আধিপত্য প্রবলতর হয়ে ওঠে, চিনের নানা স্থানে বিদেশী সেনাবাহিনী মােতায়েন করা হয়, জাতীয় ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয় মর্যাদা ভীষণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ঐতিহাসিক ক্লাইড ও বিয়ার্স বলেন যে, বক্সার বিদ্রোহ চিনে বিদেশী অনুপ্রবেশ ও শােষণের বিরুদ্ধে চিনা জনগণের ঘােরতর অসন্তোষ ও তার রদ করার জন্য জাতীয় প্রতিবাদের ইঙ্গিত বহন করে ।
(২) এই বিদ্রোহ পরােক্ষভাবে চীনের সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌমিক অখন্ডতা রক্ষায় সাহায্য করে। বিদেশী রাষ্ট্রগুলি উপলব্ধি করে যে, চিনের অধিকতর আগ্রাসী মনােভাব গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত হবে না, কারণ সে ক্ষেত্রে পুনরায় বিদ্রোহ দেখা দেবে। তাই যা পাওয়া গেছে, সেটা নিয়ইে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে সব রাষ্ট্রকে “উন্মুক্ত দ্বার।.” নীতি” যথাযথভাবে পালনের পরামর্শ দেন।
(৩) বিপ্লবের ব্যর্থতার পর চিনের শাসক-সম্প্রদায় উপলব্ধি করে, যে চিনকে শক্তিশালী করতে গেলে প্রতিক্রিয়াশীল নীতি ত্যাগ করে পাশ্চাত্যের আদলে সংস্কার কর্মসূচী গ্রহণ করা আবশ্যক।
(৪) বক্সার আন্দোলন ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করে এবং ড. সান ইয়াৎ সেনের নেতৃত্বে চিন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠত হয়।
Comment ( 1 )
good