হিমালয়ের পাদদেশে নেপালের তরাই অঞলে কপিলাবস্তু নামক স্থানে শাক্যবংশীয় ক্ষত্রিয়দের একটি ক্ষুদ্র গণতান্ত্রিক রাজ্য ছিল। এই রাজ্যেরই রাষ্ট্রপ্রধান শুদ্ধোধনের পুত্র সিদ্ধার্থ ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক। সিদ্ধার্থ আনুমানিক ৫৬৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে (মতান্তরে ৬২৪ খ্রিস্টপূর্ব) কপিলাবস্তুর কাছে লুম্বিনি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তার মায়ের মৃত্যু হওয়াতে তিনি মাতৃম্বসা গৌতমী কর্তৃক লালিত-পালিত হন; সেই জন্য তাঁর অপর নাম গৌতম।
বৌদ্ধ ধর্ম প্রবর্তনে পদক্ষেপ
গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক বৌদ্ধ ধর্ম প্রবর্তনের পদক্ষেপগুলি হলাে-
মহাভিনিষ্ক্রমণ
রাজ-ঐশ্বর্য ও বিলাসের মধ্যে বাস করেও তিনি প্রথম থেকেই উদাসীন হয়ে ওঠেন। ১৬ বছর বয়সেই গােপা নামের এক রাজকুমারীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। কিন্তু মানবসন্তানের দুঃখ, কষ্ট, জরা, মৃত্যু প্রভৃতি তার মনকে অস্থির করে তােলে। অবশেষে একদিন সত্যের সন্ধানে তিনি স্ত্রী, নবজাত পুত্র এবং রাজপ্রাসাদের ভােগবিলাস পরিত্যাগ করেন। বৌদ্ধ ইতিহাসে এটি ‘মহাভিনিষ্ক্রমণ’ নামে খ্যাত।
বুদ্ধত্ব প্রাপ্তি
গৃহত্যাগের পর গৌতম বিভিন্ন সন্ন্যাসীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সত্যের সন্ধানে নিমগ্ন হন এবং নানাভাবে যােগাভ্যাস ও কৃচ্ছসাধন প্রভৃতি প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করেও শান্তি পাননি। পরিশেষে তিনি গয়ার নিকটে উরুবি নামক স্থানে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হন এবং পরে বর্তমান বােদ্ধগয়ায় এক বৃহৎ অথবৃক্ষের তলে ধ্যানে নিমগ্ন থাকবার সময় বােধি বা দিব্যজ্ঞান লাভ করেন। অতঃপর তিনি বুদ্ধ’ অর্থাৎ পরমজ্ঞানী বা ‘তথাগত’ (অর্থাৎ সত্যের সন্ধান প্রাপ্ত) নামে পরিচিত হন।
ধর্মপ্রচার
পরম জ্ঞান লাভ করে তিনি সারনাথে এসে তার নবলব্ধ জ্ঞান প্রচারে ব্রতী হন এবং সেখানে পঞভিক্ষু নামে পরিচিত শিষ্যদের উপদেশ বিতরণ করেন তা বৌদ্ধ ইতিহাসে ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন’ নামে খ্যাত। পরবর্তী দীর্ঘ ৪৫ বৎসর তিনি বিহার ও অযােধ্যায় তার বাণী প্রচার করেন। তিনি শিষ্যদের দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করেছিলেন। উপাসক’ ও ‘ভিক্ষু’। যাঁরা শিষ্যত্ব গ্রহণ করে গৃহী জীবনযাপন করতেন তারা উপাসক এবং যাঁরা সন্ন্যাস গ্রহণ করতেন তারা ভিক্ষু পর্যায়ভুক্ত হতেন।
মহাপরিনির্বাণ
তিনি বুদ্ধসঙ্গা’ নামে প্রতিষ্ঠান গঠন করে তার ধর্মপ্রচারকে সংগঠিত রূপ দিয়েছিলেন। অবশেষে ৮০ বৎসর বয়সে কুশিনগর নামক স্থানে তিনি দেহরক্ষা করেন। বৌদ্ধ ইতিহাসে এটি ‘মহাপরিনির্বাণ’ নামে অভিহিত হয়ে থাকে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .