কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
কতকগুলি বিশেষ নির্বাচিত ক্ষেত্রে এবং ঋণের প্রয়ােজনীয়তা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাকেই নির্বাচনমূলক বা গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ বা SCC বলা হয়। পার্থক্যমূলক সুদের হার, ঋণের র্যাশনিং, মার্জিন বা জামিনের নিয়ন্ত্রণ, নৈতিক অনুরােধ প্রভৃতি হলাে গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র।
(ক) পার্থক্যমূলক সুদের হার (DRI)
পার্থক্যমূলক সুদের হার প্রবর্তনের মাধ্যমেও অবাঞ্ছিত ক্ষেত্রে ঋণের নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যেখানে ঋণের প্রসারণ প্রয়ােজন অর্থাৎ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্ষেত্র সেখানে সুদের হার কম এবং যেখানে ঋণের প্রসারণের প্রয়ােজন নেই অর্থাৎ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত নয় এমন ক্ষেত্র সেখানে সুদের হার অপেক্ষাকৃত কম রাখা হয়।
(খ) মার্জিন বা জামিনের নিয়ন্ত্রণ (Control of Margin Requirements)
সাধারণভাবে মার্জিন বলতে বােঝায় শেয়ার বা ঋণপত্রের দামের যে অংশ নগদে ব্যাঙ্কে দিতে হবে। অর্থাৎ অনুমােদিত মােট ঋণের যে অংশ ঋণগ্রহীতাকে প্রথমে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে জমা দিতে হয়, তাকে মার্জিন মানি বলে। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক সব সময় জামিনের ভিত্তিতে ঋণ দেয় এবং ঋণের পরিমাণ জামিনের তুলনায় কম হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক শেয়ার বাজারে ফাটকা লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মার্জিনের অনুপাত পরিবর্তন করতে পারে। কম ঋণ দিতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক মার্জিন বৃদ্ধি করে, বেশি ঋণ দিতে চাইলে মার্জিন কমিয়ে দেয়।
(গ) ঋণের রেশনিং (Rationing of Credit)
এই পদ্ধতি অনুসারে ব্যাঙ্কের ঋণদানের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। অর্থাৎ কোনাে ব্যাঙ্ক কী পরিমাণ ঋণ দিতে পারবে তার সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দিয়ে থাকে।
(ঘ) প্রত্যক্ষ আদেশ (Direct Order)
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার শীর্ষস্থানে অবস্থিত। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অধীনে কাজ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রত্যক্ষভাবে আদেশ দিতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের এই আদেশ বা নিদের্শ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে মেনে নিতে হয়। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আদেশ বা নির্দেশ না মানা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তাদের হুন্ডি ভাঙাতে বা ঋণ দিতে চায় না বা বিভিন্ন শাস্তিমূলক আদেশ করে।
(ঙ) নৈতিক অনুরােধ বা প্রণােদন (Moral Suasion)
ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার মধ্যমণি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক অর্থনৈতিক সংকটকালে দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায় তার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কসমূহকে সহযােগিতা করার জন্য অনুরােধ জানিয়ে তাদের নৈতিকতা বা বিচার-বুদ্ধির কাছে আবেদন পাঠাতে পারে। ঋণদানের সময় বাছাই করে ঋণ প্রদান করতে পরামর্শ ও নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা। বাহুল্য, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের এই আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে সহযােগিতা করে।
ভারতের মতাে উন্নয়নশীল দেশের অর্থের জোগান নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ফাটকা কারবার নিয়ন্ত্রণ করতে নির্বাচনমূলক ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বা গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি প্রয়ােগ করা দরকার। এর দ্বারা দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য অনেকটা কমানাে সম্ভব।
Read More
- ঘাটতি বাজেট কাকে বলে?
- ঘাটতি ব্যয়ের অসুবিধা লেখাে।
- সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি কাকে বলে?
- বাণিজ্যচক্র কাকে বলে?
- ভারসাম্য বাজেট গুণক বলতে কী বােঝায়?
- প্রান্তিক আয় কাকে বলে?
- গড় রেভিনিউ কাকে বলে?
- কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করাে।
- বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের মূল কাজগুলি আলােচনা করাে।
- মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দু’টি রাজস্বনীতি লেখো।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .