মধ্যযুগের ইউরােপীয় ব্যবসায়ী ও কারিগর শ্রেণি নিজেদের শ্রেণিস্বার্থ রক্ষা, নানা ধরনের সুযােগ-সুবিধা আদায় করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে আলাদা আলাদা ঐক্যবদ্ধ সংঘঠন গড়ে তুলত। এই সংগঠন বা সংঘগুলি ‘গিল্ড’ নামে পরিচিত ছিল।
মধ্যযুগে বাণিজ্যের প্রসারে ইউরােপের গিল্ডগুলি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল। এইগুলি হলাে-
সততার প্রতিষ্ঠা
গিল্ডগুলি পণ্যদ্রব্যের গুণগত মান বজায় রাখার বিষয়ে উদ্যোগ নিত। তা ছাড়া তারা ব্যবসায় দুর্নীতি প্রতিরােধ করার মতাে ব্যবসায়িক সততা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করত।
পণ্যের মূল্য
গিল্ডগুলি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরােধ করত এবং পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে ব্যবসায়িক রেষারেষি বন্ধ করত। কোনাে ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য অহেতুক বাড়াবার চেষ্টা করলে গিল্ড তাকে শাস্তি দিত।
কাজ সচল রাখা
কারখানায় কাঁচামাল ও শ্রমিকের নিয়মিত জোগান, শ্রমিকের কাজের সময় বেঁধে দেওয়া, কারখানায় কাজের সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখা প্রভৃতি দায়িত্ব গিল্ড পালন করত।
অন্যান্য পদক্ষেপ
গিল্ডগুলি বাণিজ্যের প্রসারে আরও কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করত। যেমন –
ক) শিক্ষাদান : উৎকৃষ্ট শিল্প সামগ্রী উৎপাদনের উদ্দেশ্যে গিল্ডগুলি শিক্ষানবিশদের শিল্প সংক্রান্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করত।
খ) শুল্ক মকুব : আর্থিক লাভ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শহরের অভ্যন্তরীণ সব ধরনের বাণিজ্য শুল্ক ও কর মকুব করার বিষয়ে গিল্ড উদ্যোগ নিত।
গ) পরিদর্শক নিয়ােগ : গিল্ডের নিয়মকানুন সঠিকভাবে মান্য করা হচ্ছে কি না তা দেখার উদ্দেশ্যে গিল্ডগুলি পরিদর্শক নিয়ােগ করত।
ঘ) নগর পরিচালনা : বহু শহরে বণিক গিল্ডগুলি নগরের প্রশাসন পরিচালনা করত।
উপসংহার
মধ্যযুগের ইউরােপে গিল্ডগুলি বাণিজ্যে সততা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বাস্তব ক্ষেত্রে তা যে পুরােপুরি কার্যকর করা সম্ভব হতাে তা সমকালীন বিভিন্ন সাহিত্যে পাওয়া যায়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .