গণতন্ত্র হল জনগণের দ্বারা জনগণের জন্য জনগণের শাসন। গণতন্ত্রকে সর্বশ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থা বলে মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু গণতন্ত্রকে সর্বশ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থারূপে গ্রহণ করা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এই কারণে গণতন্ত্রের সপক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তির অবতারণা করা হয়। উপরোক্ত দুটি পৃথক দৃষ্টিকোণ বিশ্লেষণ করে আমরা গণতন্ত্রের দোষগুণ নিয়ে এখানে আলোচনা করতে পারি।
গণতন্ত্রের পক্ষে যুক্তি বা গণতন্ত্রের গুণ
গণসার্বভৌমত্ব নীতির বাস্তবায়ন
গণতন্ত্রের প্রধান গুণ হল এখানে গণসার্বভৌমত্বের নীতি বাস্তবে রূপ পায়। জনগণ এখানে সমগ্র রাষ্ট্রক্ষমতার মূল উৎস। গণতন্ত্রে জনগণের সম্মতি নিয়ে সরকার গঠিত হয়। সরকার তার যাবতীয় কাজকর্মের জন্য জনগণের কাছে দায়িত্বশীল থাকে।
স্বাভাবিক অধিকার তত্ত্বের সার্থক রূপায়ণ
স্বাভাবিক অধিকারের তত্ত্ব অনুসারে প্রতিটি ব্যক্তি তার ভাগ্য নির্ধারণ করার অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। গণতন্ত্রে প্রতিটি ব্যক্তি সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হওয়ায় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এই নীতির বাস্তবায়ন ঘটে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা
গণতন্ত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফাইনারের মতে, একমাত্র গণতন্ত্রে যথাবিহিত আইনি পদ্ধতি ছাড়া ব্যক্তিজীবনে হস্তক্ষেপ করা যায় না। নিজেদের কাজের জন্য শাসকবর্গকেও গণতন্ত্রে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়।
ব্যক্তির সর্বাধিক কল্যাণ
গণতন্ত্রে আদর্শবাদী তত্ত্বের ও হিতবাদী তত্ত্বের সমর্থন দেখতে পাওয়া যায়। আদর্শবাদ অনুসারে, গণতান্ত্রিক পরিবেশে ব্যক্তি তার আত্মবিকাশের জন্য সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। অন্যদিকে, হিতবাদী তত্ত্বের মূল নীতি— সর্বাধিক ব্যক্তির সর্বাধিক কল্যাণ (Greatest good of the greatest number) — গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই রূপায়িত হয়।
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারবিভাগের অস্তিত্ব
গণতন্ত্রের একটি বড়ো গুণ হল স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচারবিভাগের উপস্থিতি। বিচারবিভাগের স্বাধীনতার শর্তাবলি একমাত্র গণতন্ত্রে যথাযথভাবে পূর্ণ হয়। সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা ও নাগরিক অধিকারের সংরক্ষণের বিষয়ে বিচারবিভাগ গণতন্ত্রে এক দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .