ক্রিপস প্রস্তাব
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীকে না জানিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কথা বললে কংগ্রেস এর বিরােধীতা করে। এর ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে জাপানী আক্রমণের আশঙ্কায় ব্রিটিশ সরকার বিচলিত বােধ করে। এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট চার্চিলকে ভারতীয়দের সঙ্গে বােঝাপড়ায় আসার কথা বলেন এবং বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রি চার্চিল তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্য মিষ্টিভাষী ও ঠান্ডা মাথার লােক স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ১৯৪২ খ্রিঃ মার্চে ভারতে প্রেরণ করেন। ক্রিপস্ ভারতবাসীর সঙ্গে আলােচনা করে এক প্রস্তাব পেশ করেন যা ক্রিপস্ প্রস্তাব নামে পরিচিত।
ক্রিপস প্রস্তাবের শর্ত
এক সপ্তাহ বিভিন্ন ভারতীয় স্তরের নেতৃবৃন্দের সাথে আলােচনার পর ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সামনে ক্রিপস ২৯ শে মার্চ একটি প্রস্তাব রাখেন। এই প্রস্তাবে বলা হয় যে,
১) যুদ্ধ শেষে ভারতকে ‘ডােমিনিয়নের মর্যাদা দেওয়া হবে।
২) যুদ্ধ শেষে ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান গড়া হবে এবং এই সভা নতুন শাসনতন্ত্র রচনা করবে।
৩) ভারতের কোন প্রদেশ বা দেশীয় রাজ্য ঐ শাসনতন্ত্র গ্রহণে অস্বীকৃত হলে, সেই প্রদেশ বা দেশীয় রাজ্য নিজেদের শাসনতন্ত্র রচনা করবে।
৪) সংবিধান সভায় ব্রিটিশ ভারতের সদস্যগণ প্রাদেশিক আইনসভার নিম্মকক্ষ দ্বারা নির্বাচিত হবেন এবং দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধিরা দেশীয় নৃপতিদের দ্বারা মনােনিত হবেন।
৫) সংবিধান তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ওপর ব্রিটিশের পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে এবং ভারতীয়দের পূর্ণ সহযােগিতায় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় সম্পদকে যুদ্ধকার্যে ব্যবহার করবে।
ক্রিপস প্রস্তাবের ব্যর্থতার কারণ
ক্রিপস্ প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল। কারণ—
১) এই প্রস্তাবে পূর্ণ স্বাধীনতার কথা বলা হয়নি—যুদ্ধাবসানে ডােমিনিয়ন স্ট্যাটাস দেবার কথা বলা হয়েছিল মাত্র। তাই জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারেনি।
২) প্রদেশগুলিকে বিছিন্ন হবার অধিকার দান করার অর্থই হলাে পরােক্ষ জিন্নার পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের দাবী মেনে নেওয়া।
৩) এই প্রস্তাবের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গড়ে তােলার কোনাে উল্লেখ ছিল না। তাই গান্ধীজি এই প্রস্তাবকে “ a post – dated cheque on a crushing bank ” বলে অভিহিত করেন।
৪) দেশীয় রাজ্যের প্রতিনিধিদের রাজারা মনােনিত করবেন, জাতীয় কংগ্রেস তা মানতে পারেনি। জওহরলাল নেহেরু ক্রিপসের বন্ধু ছিলেন। তিনি পরবর্তীকালে লেখেন—
“আমি যখন এই প্রস্তাবগুলি প্রথম দেখি খুবই ভেঙে পড়ি”।
৫) মুসলিম লীগ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কারণ এতে পাকিস্তানের কোন সুপষ্ট তশ্রুতি ছিল না।
ক্রিপস্ প্রস্তাব বিভিন্নভাবে সমালােচিত হয়। গান্ধীজি ক্রিপসের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। “If this is four entire proposal to India, I would advise you to take next plane home.” ঐতিহাসিক এস.গােপাল বলেছেন – ক্রিপস প্রস্তাব ছিল রক্ষণশীল, প্রতিক্রিয়াশীল এবং সীমাবদ্ধ।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .