ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা
চিন ছিল প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি এবং এই সভ্যতা ছিল ভারতের মতােই সুপ্রাচীন। গর্বিত চিনারা নিজেদের দেশকে স্বর্গীয় দেশ’ (Celestial Empire) এবং চীন সম্রাটকে ‘স্বর্গের সন্তান’ বলে মনে করত। তারা বিশ্বস করত যে, তিনি স্বর্গের অনুশাসনে তার রাজ্য গর্বিত চিনারা বিদেশীদের বর্বর’ বলে মনে করত। তারা মনে করত যে, বিদেশ থেকে তাদের কিছু শেখার বা গ্রহণ করার নেই। এ কারণে তারা চিনে বিদেশীদের আগমন ও বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের ঘােরতর বিরােধী ছিল। চিনে বিদেশীদের প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধই ছিল এবং চিন সম্রাটের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কোন ইউরােপীয় চীনে প্রবেশ করতে পারত না। কোন বিদেশী দূত বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে চিন সম্রাটের সাক্ষাৎপ্রার্থী হলে প্রথমে তাকে চিন সম্রাটের প্রতি বশ্যতা স্বীকারের নিদর্শন স্বরূপ দুটি অপমানজনক কাজ করতে হত। চিন সম্রাটকে নজরানা’ বা ‘উপঢৌকন দিতে হত এবং কাও তাও’ প্রথা অনুসারে তাকে সম্রাটের সামনে আভূমি প্রণত হতে হত। এসত্ত্বেও কিন্তু বাণিজ্যের অনুমতি মিলত না। অপরপক্ষে, চিনের মূল্যবান সাদা রেশম, সবুজ চা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের ওপর ইউরােপীয় বণিকদের আকর্ষণ ছিল দুর্নিবার। তারা নানাভাবে চিনে প্রবেশের চেষ্টা করতে থাকে।
ষােড়শ শতকে পর্তুগীজরা চিনের দক্ষিণ উপকূলে ম্যাকাও বন্দরে অতি অপমানজনক শর্তে বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। সপ্তদশ শতকে স্পেনীয়, ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকরা নানা অপমানজনক শর্তে দক্ষিণ চিনের ক্যান্টন বন্দরে বাণিজ্যের সুযােগ পায়। ক্যান্টন বন্দরে বাণিজ্যরত ইউরােপীয়দের শহরের মূল ফটকের বাইরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস ও বাণিজ্যিক কার্যকলাপ চালাতে হত। প্রধান ফটক পেরিয়ে কখনই তারা মূল শহরে প্রবেশ করতে পারত না। সরকারের অনুমােদন-প্রাপ্ত কোহ-হং নামক বণিক-সঘের মাধ্যমেই তাদের সমস্ত লেনদেন চালাতে হত- কোন অবস্থাতেই তাদের চিনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেওয়া হত না বা তারা অন্য বণিকদের কাছ থেকেও সস্তা দরে মাল কিনতে পারত না। তাদের চিনা ভাষা ও আদব-কায়দা শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল এবং ক্যান্টনে তারা চিনা ফৌজদারী ও বাণিজ্যিক আইন মেনে চলতে বাধ্য ছিল। এই ব্যবস্থা ক্যান্টনপ্রথা’ নামে পরিচিত ছিল। এই ধরনের কঠোরও অপমানজনক বিধিনিষেধ সত্ত্বেও চিনে ইউরােপীয়দের আগমন বন্ধ করা যায়নি। চিনে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য তারা নানাভাবে চেষ্টা চালাতে থাকে।
Read More
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .