Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

প্রশাসনিক গ্রন্থরূপে কৌটিল্যে অর্থশাস্ত্রের গুরুত্ব নির্ণয় করাে।

প্রশাসনিক গ্রন্থরূপে কৌটিল্যে অর্থশাস্ত্রের গুরুত্ব নির্ণয় করাে।

প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে লেখা কোনাে ধারাবাহিক ইতিহাস না থাকলেও ছিল ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্য। এর পাশাপাশি ছিল সমাজ, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি বিষয়ে লিখিত গ্রন্থ। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য দু’টি গ্রন্থ হলাে মেগাস্থিনিসের লেখা ইন্ডিকা এবং কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র।

কৌটিল্য ও তার অর্থশাস্ত্র

প্রাচীন যুগের সাহিত্যে ‘অর্থশাস্ত্র’ নামক গ্রন্থটির উল্লেখ ছিল, কিন্তু গ্রন্থটি বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্ভবত মৌর্যযুগে কৌটিল্য এর রচয়িতা ছিলেন। পরবর্তীকালে এর সঙ্গে নতুন তথ্যাদি যােগ হয়েছিল। বস্তুতপক্ষে কৌটিল্যের রচনায় রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানা যায়।

সপ্তাঙ্গ মতবাদ

প্রাচীন ভারতের রাজ্যশাসন ও আর্থিক অবস্থা-সংক্রান্ত উপদেশাত্মক গ্রন্থগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য হলাে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র। অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য দেখিয়েছেন রাজাই রাষ্ট্র নয় বরং তিনি রাষ্ট্রের অংশমাত্র। তার মতে, মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ ভিন্ন ভিন্ন কাজ করলেও সামগ্রিকভাবে মানবশরীরকে সচল রাখে। তেমনই রাষ্ট্রেরও বিভিন্ন অঙ্গ রয়েছে। কৌটিল্য রাষ্ট্রের এরূপ সাতটি অঙ্গকে চিহ্নিত করেছেন, যা সপ্তাঙ্গ মতবাদ’ নামে পরিচিত। কৌটিল্য বর্ণিত রাষ্ট্রের বা রাজ্যের সাতটি অঙ্গ হলাে – স্বামী (রাজা), অমাত্য (পদস্থ রাজকর্মচারী), পুর (শহরাঞ্চল), রাষ্ট্র (গ্রামাঞ্চল), কোষ (কোষাগার), দণ্ড বা বল (শাস্তিবিধান) ও মিত্র।

প্রতিবেশী রাজ্যজয়

‘অর্থশাস্ত্রে’ যে রাষ্ট্র ব্যবস্থার নীতি তুলে ধরা হয়েছে তা ম্যাকিয়াভেলির নীতির অনুরূপ বলা যায়। তার মতে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রকাশ্যেই হােক বা প্রচ্ছন্নভাবেই হােক শত্রুতা বিদ্যমান থাকে। এইজন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি ভঙ্গ করে সুযােগমতাে অন্য রাজ্য আক্রমণ করা মােটেই দূষণীয় নয়; তার মতে রাষ্ট্রনীতিতে নৈতিকতার কোনাে স্থান নেই।

রাজার ক্ষমতা

রাজা হলেন রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তা, কিন্তু তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে কঠোর নির্দেশ ছিল। জনকল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে উচ্চ রাজকর্মচারী ও মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শক্রমে তাকে দেশ শাসন করতে হতাে।

বিভিন্ন রাজকর্মচারী

রাজা দক্ষ অমাত্য বা রাজকর্মচারীর সাহায্যে তার শাসন পরিচালনা করবেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য নানা প্রকার অধ্যক্ষ নিয়ােগের উল্লেখ আছে, যেমন – নগরাধ্যক্ষ, বলাধ্যক্ষ প্রমুখ।

প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা

প্রাদেশিক শাসনকর্তাকে সাধারণত রাজপরিবার থেকেই নিযুক্ত করা হতাে। ছােটো প্রদেশগুলির শাসনভার রাষ্ট্রীয়’ উপাধিধারী রাজকর্মচারীদের ওপর ন্যস্ত হতাে। স্থানিক’-রা ছিলেন প্রদেশের এক-একটি অংশের শাসনকর্তা এবং গােপ’-রা কয়েকটি গ্রামের শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। প্রদেষ্টী’-রা তাদের কাজ পরিদর্শন করার জন্য নিযুক্ত হতেন।

রাজস্ব

আর্থিক স্বচ্ছলতাই রাষ্ট্রের প্রকৃত বল। অতএব অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য রাজকোষের ওপর দৃষ্টি রাখার প্রয়ােজনীয়তার কথা বলেছেন। এছাড়া রাজস্ব, জলকর, উপাধি বিক্রয়লব্ধ অর্থ, বিক্রয়কর প্রভৃতি সরকারি আয়ের পন্থা রূপে উল্লেখিত আছে।

বিচার ব্যবস্থা

কেন্দ্রে রাজ বিচারালয় ছাড়াও কৌটিল্য আরও কয়েক প্রকার নিম্ন বিচারালয়ের উল্লেখ করেছেন, যেমন – ‘থানীয়’, ‘দ্রোণমুখ’ এবং সংগ্রহণ। গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র মামলাগুলি ‘গ্রামিকদের দ্বারা মীমাংসিত হতাে।

উপসংহার

রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা ছাড়াও ‘অর্থশাস্ত্র থেকে জনসাধারণের অবস্থা, সামাজিক রীতিনীতি ও ক্রীড়া-কৌতুক সম্বন্ধেও অনেক তথ্য জানা যায়। তাই বলা হয় – কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র মৌর্যযুগের ইতিহাস রচনার অন্যতম নির্ভরযােগ্য উপাদান।

Download PDF

Please wait..
If the download didn’t start automatically, click here.

Leave a reply