ইউরোপীয় বণিক সংঘ
1707 খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরবর্তীকালে মুঘল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় ও ভাঙনের সূত্রপাত হয়। তাঁর বংশধরেরা কেউই পূর্বতন সম্রাটের ব্যক্তিত্ব, মনোবল, পরাক্রম বা মিতব্যয়িতার অধিকারী ছিলেন না। রাজসভার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা সমগ্র ভারতবর্ষে এক অশনি সংকেতের সূচনা করে।
1764 খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ (Battle of Buxar, 1764) মুঘল সাম্রাজ্যের ভাগ্যবিপর্যয় ডেকে আনে। অবশেষে 1803 খ্রিস্টাব্দে লর্ড লেক ( Lord Lake)-এর নেতৃত্বে কোম্পানির সৈন্য দিল্লিতে প্রবেশ করে এবং সমগ্র উপমহাদেশে তৈমুরীয় আধিপত্যকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানায়।
মুঘল সম্রাটের এই শোচনীয় অবস্থার সুযোগ নিয়ে এবং অনেকাংশে প্রশাসনিক নিস্পৃহতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে যোগ্য রাজকর্মচারীগণ ও প্রাদেশিক শাসকেরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভাগ্যান্বেষণে অবতীর্ণ হন। বাংলা, অযোধ্যা, হায়দরাবাদ এই প্রবণতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।
উল্লেখযোগ্য বিষয় যে, 1700-1880 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভারতবর্ষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এক ব্যাপক পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়। একদিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও সামরিক বলে বলীয়ান প্রাদেশিক রাজ্যের শাসকেরা স্ব-স্ব রাজ্যের সীমানা বিস্তারের উদ্দেশ্যে একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হন।
অন্যদিকে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ইউরোপীয় বণিক সঙ্ঘগুলি (East India Company) এবং তাদের সম উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রতিনিধিরা এই রাজনৈতিক ডামাডোলের সুযোগ গ্রহণ করতে সচেষ্ট হন। এই সুযোগসন্ধানী ইউরোপীয়দের মধ্যে ফরাসিরা ছিলেন অগ্রণী। পণ্ডিচেরির গভর্নর ডুপ্লে (Dupleix) দেশীয় রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ অন্তর্দ্বন্দ্বে হস্তক্ষেপ করার পক্ষপাতী ছিলেন।
একদিকে যেমন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা সমগ্র ভারতবর্ষে এক অশনি সংকেতের সূচনা করেছিল অন্যদিকে প্রাদেশিক রাজ্যের শাসকেরা স্ব-স্ব রাজ্যের সীমানা বিস্তারের উদ্দেশ্যে একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত ছিল এই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় বণিক সংঘগুলি ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .