আয়ের বৃত্তস্রোত
ধনতান্ত্রিক ও মিশ্র অর্থ ব্যবস্থাতে দ্বিমুখী স্রোত বৃত্তাকারে সবসময় বয়ে চলেছে। কারণ এই ধরনের অর্থ ব্যবস্থায় মৌল একক হলো দু’টি। যথা – 1. পরিবারসমূহ এবং 2. ফার্ম বা উৎপাদন প্রতিষ্ঠানসমূহ। সমাজের এই দু’টি এককের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি বা পরিবার একদিকে দ্রব্য বা সেবার ক্রেতা; অন্যদিকে, ফার্মগুলি হলো দ্রব্য বা সেবার বিক্রেতা। ব্যক্তি বা পরিবারগুলি উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদান ফার্মগুলিকে বিক্রি করে আয় করে এবং ফার্মগুলি ওই উৎপাদন কিনে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম ব্যক্তি বা পরিবারকে বিক্রি করে আয় করে। ফার্মগুলির যে আয়, পরিবারগুলির তা ব্যয়। অন্যদিকে, পরিবারগুলির যে আয়, ফার্মগুলির তা ব্যয়। এভাবে সমাজে বা অর্থ ব্যবস্থায় আয়-ব্যয়ের বৃত্তস্রোত সব সময় বয়ে চলেছে। ফার্ম থেকে পরিবারে এবং পরিবার থেকে ফার্মে উপার্জিত আয় অবিরাম গতিতে যাতায়াত করে বলে একে আয়ের বৃত্তস্রোত (Circular Flow of Income) বলে।
ধরা যাক – পরিবার ক্ষেত্রকে ‘H’ এবং ফার্ম ক্ষেত্রকে ‘F’ অক্ষর দিয়ে চিহ্নিত করা হলো। কাজেই এই সরল অর্থ ব্যবস্থায় ‘H’ এবং ‘F’ ক্ষেত্রের মধ্যে একটি লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যদি অনুমান করে নেওয়া হয় যে, প্রতিটি ক্ষেত্র তাদের মোট আয়ের সমগ্র অংশই ব্যয় করে, তবে এক্ষেত্রে ‘H’ ক্ষেত্রের ব্যয় = ‘F’ ক্ষেত্রের আয় এবং ‘F’ ক্ষেত্রের ব্যয় = ‘H’ ক্ষেত্রের আয়। এইভাবে আয়-ব্যয়ের বৃত্তস্রোত সৃষ্টি হয়।
ধরা যাক, উৎপাদন কার্য সম্পূর্ণ করার জন্য F ক্ষেত্র H ক্ষেত্র থেকে শ্রম-পরিষেবা ক্রয়ের জন্য ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট সময়ে F ক্ষেত্রের এই ব্যয় H ক্ষেত্রের যে আয় সৃষ্টি করে তার পরিমাণ 200 কোটি টাকা। অপরদিকে, F ক্ষেত্র যে দ্রব্যসমূহ উৎপাদন করে সেগুলি H ক্ষেত্র ক্রয় করে। অর্থাৎ H ক্ষেত্র উৎপাদিত দ্রব্যসমূহ ক্রয়ে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে। অর্থাৎ ওই নির্দিষ্ট সময়সীমায় F ক্ষেত্রের সৃষ্ট আয় হবে ২০০ কোটি টাকা। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট সময়ে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে লেনদেনের কার্য সম্পূর্ণ করার জন্য যে আয় ও ব্যয়ের প্রবাহ সৃষ্টি হয়, তাকেই আয়ের বৃত্তস্রোত বলা হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .