ইতিহাসের পরিভাষায় ঔপনিবেশিক শাসনের স্বার্থে ভারতীয় কুটির শিল্পের ধ্বংস সাধনকেই ‘অবশিল্পায়ন’ বলা হয়। সব্যসাচী ভট্টাচাৰ্য্য তার “ঔপনিবেশিক ভারতের অর্থনীতির ১৮৫০-১৮৭৪” গ্রন্থে বলেছেন যে, “যদি দেশের মানুষ শিল্পকর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে, অথবা জাতীয় আয়ে কৃষিজ অংশ বাড়তে থাকে আর শিল্পজ অংশ কমতে থাকে, তাকে অবশিল্পায়ন বলা যেতে পারে।” কুমকুম চট্টোপাধ্যায় ও দেবেন্দ্রবিজয় মিত্র সুতি বস্ত্রকে সতেরাে ও আঠারাে শতকের বাংলার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, এই বস্ত্রশিল্পের পতনকে কেন্দ্র করেই ভারতের অবশিল্পায়ন শুরু হয়।
ভারতের অবশিল্পায়ন মূলত দুটি কারণে ঘটেছিল—শিল্পবিপ্লবের অভিঘাত ও ব্রিটিশ সরকারের শুল্কনীতি। মূলত ইংল্যান্ডের যন্ত্রচালিত সস্তা মালের তুলনায় ভারতীয় তাঁত বস্ত্রশিল্প প্রতিযােগিতায় পিছিয়ে পড়েছিল। তার সঙ্গে চড়া হারে শুল্ক স্থাপন ভারতীয় বস্ত্রশিল্পকে ধ্বংস করে দেয়।
গবেষক হ্যামিলটন, ড্যানিয়েল থার্নার, মরিস ডেভিড মরিসের মতাে কয়েক জন ঐতিহাসিক এই অবশিল্পায়নের তত্ত্বকে একটি অলীক কল্পনা বলে প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ইংরেজদের ভারতে আসার আগে এদেশে কোনাে সমৃদ্ধ বস্ত্রশিল্প ছিল না। তাই তাকে ধ্বংসের তত্ত্ব অলীক। কিন্তু ইরফান হাবিব, জাপানী গবেষক মাৎসুই, তপন রায়চৌধুরি, ড. বিপানচন্দ্র, ডঃ, অমিয় বাগচী প্রমুখ এই মতের বিরােধিতা করে অবশিল্পায়নকে একটি বাস্তব ঘটনা বলে দৃঢ় মত ব্যক্ত করেছেন। ইরফান হাবিবের মতে, “মরিস প্রমুখ উপনিবেশবাদের চরিত্র আড়াল করে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করায় প্রকৃত সত্য ধরতে পারেননি।” নরহরি কবিরাজের মতে, “কোন যুক্তি দিয়েই অবশিল্পায়নকে অস্বীকার করা যায় না। তবে সত্যিকারের ভারতে ‘অবশিল্পায়ন হয়েছিল কিনা তা নিয়ে আজও ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক বিদ্যমান।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .